সৈকত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘লাল কাঁকড়া’

মুহিবুল্লাহ মুহিব :

এক সময় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে এসে সৈকতে নামলেই পর্যটকদের চোখে পড়ত লাখ লাখ লাল কাঁকড়া। মনে হতো কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিচ্ছে কাঁকড়ার দল।

সম্প্রতি অর্থলোভী ও পরিবেশ বিরোধী কিছু ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে সৈকতে ঘোড়া ও বিচ বাইকের ব্যবসা করছে। এসব ঘোড়া ও বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচলের কারণে কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লাল কাঁকড়া।

কয়েক বছর আগেও সৈকতে নেমেই ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দল দেখতে পেত দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকরা। সেই সব কাঁকড়া এখন আর সৈকতে খুব একটা দেখা যায় না। তাই পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ।

এদিকে কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সমুদ্র সৈকত জুড়ে বাণিজ্যিকভাবে বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচলের পাশাপাশি শব্দ দূষণ এবং অবৈধভাবে কিটকট চেয়ার ও ছাতা বসানোয় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের পরম বন্ধু লাল কাঁকড়া।

সৈকত তীরের সৌন্দর্য রক্ষার্থে থাকা এসব জীববৈচিত্র বিলুপ্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। ফলে কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক।

সৈকতে বেড়াতে আসা এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিফাত উল্লাহ জানান, কক্সবাজার থেকে খুব হতাশা নিয়ে ফিরছেন তিনি। কারণ তিনি সমুদ্র সৈকতের লাল কাঁকড়া দেখার আশা নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন। কিন্তু কোথাও তেমন একটা লাল কাঁকড়ার দেখা মেলেনি।

তার মতে, সমুদ্র সৈকতের হিমছড়িস্থ সেনা ক্যাম্প, ইনানী ও ডায়াবেটিক পয়েন্টের অদূরে উত্তরের জনশূন্য সমুদ্র তীরে কিছু লাল কাঁকড়ার দেখা মিললেও তা সামান্য। এতে যেমন হতাশ হলেন তিনি, তেমনিভাবে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের বাহারছড়া, জাহাজপুরা, শামলাপুর, ইনানী, হিমছড়ি, সেনা ক্যাম্প, মো. শফিরবিল, মাদারবনিয়া, মনখালী, ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনো পর্যন্ত কিছু লাল কাঁকড়ার বিচরণ রয়েছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম।

স্থানীয়রা জানায়, সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়া রক্ষা করতে যত্রতত্র বিচ বাইক ও ঘোড়াসহ অন্যান্য সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যান চলাচল বন্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণের জন্য চারণভূমি চিহ্নিত করে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে। সেখানে তারা নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরার পাশাপাশি বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত সরকার এবং পরিবেশবাদীদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান জানান, সৈকতে মানুষের বিচরণ বৃদ্ধির কারণে হারিয়েছে লাল কাঁকড়া। সৈকত জুড়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণেও লাল কাঁকড়া হারিয়ে যাচ্ছে। বিচ বাইকসহ নানা কারণে আজ সৈকতের পরিবেশ হুমকিতে পড়েছে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম জানান, উচ্ছেদ করার পরও বিচ দখল করছে এক শ্রেণির চক্র। যারা প্রতিনিয়ত সৈকত দখল করে নিচ্ছে। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অনেক প্রাণী।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। তবে মানুষের চলাচল বৃদ্ধির কারণে ১১টি পয়েন্টে এখন লাল কাঁকড়ার দেখা মিলে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’